বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। রাজস্ব আদায়ে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছিও যেতে পারছে না কোনোভাবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যপূরণ কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। এ চার মাসে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০ হাজার ১০৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ১৪ হাজার ২৪৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত জুলাইয়ে ৩৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ ঘাটতি দিয়েই শুরু হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের রাজস্ব আদায়ের যাত্রা। ওই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ৪ হাজার ৯৮০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর আদায় হয়েছে ৩ হাজার ২৯৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আগস্টে ৫ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩ হাজার ২৬৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৪৫০ কোটি লাখ টাকা লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অক্টোবরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৩৭৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা, হয়েছে ৩ হাজার ৮৭১ কোটি ৮ লাখ টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে থাকলেও গত চার মাসে আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১৬ হাজার ৬৯৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর বিপরীতে আদায় হয় ১৪ হাজার ১৮৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ০২ শতাংশ কম।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, ঘাটতি কাটাতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা শুল্কসংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা নিষ্পত্তি, অবৈধ আমদানির বিরুদ্ধে কড়াকড়ি, চোরাচালান প্রতিরোধ ও আমদানি পণ্যের যথাযথ মূল্যায়নের ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
চীনে গত বছর জানুয়ারি থেকে শুরু হলেও আমাদের দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয় মার্চ থেকে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কারণে বিশ্বজুড়েই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ে।
রাজস্ব ঘাটতির জন্য বৈশ্বিক মহামারী করোনাই প্রধান কারণ বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. ফখরুল ইসলাম। পাশাপাশি উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব কমেছে বলে জানান তিনি। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ৬০-৭০ শতাংশ পণ্য আমদানি হয় চীন থেকে। গত মার্চ থেকে কভিড-১৯-এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করলেও চীনে তা শুরু হয় জানুয়ারি থেকে। কাছাকাছি সময়ে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও কভিড সংক্রমণ মোকাবিলায় শুরু হয় কারফিউ আর লকডাউন। আমাদের দেশেও সাধারণ ছুটির কারণে বন্ধ হয়ে পড়ে বিভিন্ন শিল্পকারখানা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় শিল্পকারখানাগুলোতে উৎপাদন ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। মূলত চীনে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়া মানেই রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়া।
কাস্টম কমিশনার বলেন, কভিডের প্রভাবের পাশাপাশি উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানির হার কমে যাওয়াও রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেমন এ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যে পরিমাণ গাড়ি আমদানি হওয়ার কথা, সে তুলনায় তা অনেক কম হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন সুবিধার কারণে গাড়ি আমদানিকারকরা চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা বন্দরকেই প্রাধান্য দিচ্ছে।
রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে থাকা প্রসঙ্গে কমিশনার ফখরুল ইসলাম বলেন, সিংহভাগ রাজস্ব আসবে আমদানি পণ্যের শুল্ক থেকে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের অর্থবছরের তুলনায় যে প্রবৃদ্ধি ধরা হয় বাস্তবে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সেই প্রবৃদ্ধি অনেক কম। আমদানি প্রবৃদ্ধি যদি সেভাবে না বাড়ে তাহলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অবশ্যই কঠিন। তবু রাজস্ব আহরণের এ ঘাটতি কাটাতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অবৈধভাবে পণ্য আমদানির ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, চোরাচালানের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এবং আমদানি পণ্যের যথাযথ শুল্কায়ন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শুল্কায়নসংক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়কেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ভয়েস/আআ